দেশের উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকায় নির্বিঘ্নে আম সরবরাহ নিশ্চিত করতে শুক্রবার থেকে বিশেষ ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। প্রতিদিন বিকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে ঢাকায় আসবে এই ট্রেনটি।
আমের মৌসুম শুরু হয়েছে গত মাসেই। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশে পরিবহন ব্যবস্থা কার্যত স্থগিত হয়ে যাওয়ায় অন্যান্য অনেক কৃষিজ পণ্যের মত আমের সরবরাহও ব্যাহত হয়েছে।
পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে বিশেষ ট্রেনের এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই ট্রেনটি মূলত আম পরিবহণের জন্য বরাদ্দ করা হলেও এটিতে আম বাদেও অন্যান্য কৃষিজ পণ্যও পরিবহন করা হবে বলে জানা গেছে।
সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির শুরু থেকেই যদিও বলা হয়েছিল যে এই ছুটির মধ্যে সাধারণ যাতায়াত নিষিদ্ধ হলেও পণ্য পরিবহণে বাধা দেয়া হবে না, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই পণ্য পরিবহণকারী যানবাহন বিভিন্ন রকম সমস্যার মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ করে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ী ও সরবরাহকারীরা মনে করছেন আম পরিবহনে বিশেষ ট্রেন চালু হওয়ায় ঢাকা ও আশেপাশের অঞ্চলে যেমন আমের সরবরাহ নিশ্চিত হবে, তেমনি কম খরচে পরিবহন হওয়ায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে আমের দামও কমবে।
যেসব কারণে স্বস্তি পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা
গত দুই মাস ‘লকডাউন’ পরিস্থিতিতে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় পণ্য পরিবহণে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বাধা ছিল না। কিন্তু ছুটির মধ্যে শ্রমিকদের এবং পরিবহনের সহজলভ্যতা না থাকায় অনেক ব্যবসায়ীই পণ্য পরিবহন করতে সক্ষম হননি।
আবার অনেককেই পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে গুণতে হয়েছে অতিরিক্ত খরচ।
রাজশাহীর একজন আম ব্যবসায়ী শহীদ হোসেন বলেন, “ঢাকায় আম পাঠানোর জন্য অন্য সময় যেই পরিমাণ ট্রাক ভাড়া দিতে হয়, লকডাউনের মধ্যে সেই ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ দিতে হয়েছে। আবার রাস্তায়ও অন্য সময়ের চেয়ে বেশি খরচ করতে হয়েছে।”
এছাড়া, প্রতিবছর মৌসুমের আগে থেকে আগাম বাগান কিনতে আমের আড়তগুলোয় ব্যাপারীদের যে ভিড় থাকতো, তা এবছর ছিল না বলে বলছেন স্থানীয় আম চাষীরা। ফলে এবছর সব আম বিক্রি হবে কিনা, অথবা চাষীরা আমের ন্যায্যমূল্য পাবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল চাষীদের মধ্যে।
তাই আম পরিবহনের জন্য বিশেষ ট্রেনের বিষয়টি স্বস্তি দিচ্ছে আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন আম পরিবহনের নিয়মিত ট্রেন থাকলে তুলনামূলক কম দামে নিয়মিত ভিত্তিতে সরবরাহ করতে পারবেন তারা।
রাজশাহী জেলার কৃষিজ পণ্যের উৎপাদকদের সংগঠন অ্যাগ্রো ফুড প্রোডিউসার সোসাইটির আহবায়ক আনোয়ারুল হক বলছেন, নিয়মিত সরবরাহের নিশ্চয়তার কারণে ব্যবসায়ীরা এই ট্রেনের সেবা নিয়ে স্বস্তি পাচ্ছেন।
আনোয়ারুল হক বলেন, “ট্রাকে বা অন্য মাধ্যমে আম পাঠানোর ক্ষেত্রে সবসময়ই কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকে। রাস্তায় নানারকম ঝামেলার কারণে, ট্রাক অনেকসময় নির্ধারিত সময় পৌঁছায় না। আবার কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেকসময় সঠিকভাবে পরিবহন না করার কারণে আম নষ্ট হয়ে যায়।”
“নিয়মিত যদি এই ট্রেন চলে, তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আম বাজারে পৌছে যাবে।”
দাম কমবে পাইকারি বাজারে
আমের জন্য বিশেষ ট্রেন চালু করায় পাইকারি বাজারে আমের দাম বেশ কমবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। এর ফলে খুচরা বাজার থেকে ক্রেতাও কম দামে আম কিনতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
আনোয়ারুল হক বলেন, “ট্রাকে করে আম পাঠাতে আলাদা খরচ হতো। আাবার কুরিয়ারে পাঠানোর ক্ষেত্রেও প্রতি কেজিতে ১২ টাকা থেকে ২০ টাকা খরচ হতো।”
“ট্রেনে সরবরাহ শুরু হওয়ায় প্রতি কেজির খরচ দুই টাকার নিচে নেমে আসবে। অর্থাৎ প্রতি মণ আম পাঠাতে ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা খরচ কম পড়বে।” বিবিসি
Leave a Reply